বিশ্বাসে মিলায় বস্তু তর্কে বহুদূর...
কথা হলো গিয়ে "বিশ্বাসে মিলায় বস্তু" আসলেই বিশ্বাসে তা মেলে [প্রাপ্তি অর্থে] কিনা এবং তর্কে যে বহুদূর তাতে তর্ক করলে উহা প্রাপ্তির সম্ভবনা কমে যায় কিনা সেটা আলোচ্য; এটা একটি সাইকোলজিক্যাল টার্ম তাই লিখতে হলে বিস্তর লেখার পরই কনক্লুশনে পৌছানো সহজসাধ্য অন্যথায় কঠিন তবুও যতোটা পারি সংক্ষেপে উপস্থাপন করি.....
আপনি যদি কোন কিছুতে বিশ্বাস করেন [এই বিশ্বাস কিন্তু যেনতেন নয় বরং নিগূঢ় বিশ্বাস - যা মেডেটেটিভ মাইন্ডে এমন মোমেন্টাম সৃষ্টি করে যে উহা প্রাপ্তির জন্য এক অবচেতন গাঢ় চেতনা কাজ করে] - এ্যাহ, তাহলে এতো যে গভীর প্রেমে প্রেমিক প্রেমিকার কতো প্রেম কাহন তাতে বিচ্ছেদ বা ছ্যাকা খেয়ে ব্যাকা হওয়ার ঘটনা ঘটে কেন?
বলি কি...এখানেও পরিস্থিতি, প্রেক্ষাপট, বিষয় আর পরিবেশের নানান ফ্যাক্ট জড়িত; আপনার ভাবনার প্রেক্ষােটে রেফারেন্স ফ্রেমে নিজেকে এভাবে দাড় করাচ্ছেন "আপনাকে ছেড়ে সে চলে গিয়েছে" অথচ কনটেক্সট একই রেখে "সে চলে গিয়েছে আপনাকে রেখে" তাতে আর অবস্থা ও অবস্থান রিয়েলাইজ করলে তার মূল্যায়ন বা জাস্টিফিকেশান করা সহজ হয় - শুধু সহজ কেন বলি তাতে হয়তো সমাধান লুকিয়ে থাকা যে ছায়াস্বরূপ তার সন্ধান পেতে পারেন!
ছাইপাশ রেখে আসুন মূল প্রসঙ্গে সাইকোলজির সহিত লজিক নিয়ে ফিরি....
এই যে বিশ্বাস তার মাত্রা যতোটা প্রখর হবে ততোই কিন্তু যার প্রতি বিশ্বাস [এখানে ব্যক্তি ধরে নিচ্ছি - বস্তু আর বিষয়ের আলাপ পরে করছি] এর প্রভাবে মানসিক আচ্ছন্নতা প্রভাবিত করবে - সেই প্রভাবের বেষ্টনীতে আপনাকে ছেড়ে থাকা যেমন কঠিন হবে পড়বে [তাই বুঝি আঝোর সন্ধ্যায় পুরাতন দিনেরে সেই প্রণয়ের বাঁশি সম্মোহন করে....] তাই তার ফিরে আসার তথা ফিরে পাওয়ার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পাবে; এটাই কিন্তু সেই বিশ্বাস যাতে মিলায় বা মিলিয়ে দেয় তথা মিলন ঘটে!
যদি এবার নিখাঁদ বস্তু নিয়ে বলতে হয় তবে বাস্তবাদী হয়ে বস্তুত লজিক খটাতে হবে; সহজভাবেই বলি "আমি বিশ্বাস করি টাকা আমার পকেটে আসবে - আসলেই কি আসবে?" উহু...এখানে প্যারাসাইকোলজিক্যাল প্যাটার্নে "ল অব এট্রাকশন" এক আস্ত নির্বোধ লজিক্যাল ফ্যালাসি মাত্র!
টাকা একটি বস্তু তাতে কোন সেন্স নেই তাহলে সে আপনার এই মাসনিক আকর্ষণে আপনার পকেটে ঢুকবে - আপনাকে এটা প্রমাণ করতে হলে (১) টাকা [বস্তু হিসেবে উদাহরণস্বরূপ] এর যে সেন্স আছে এবং সেই সেন্স আপনার বিশ্বাস দ্বারা প্রভাবিত হতে পারে সেটার গাণিতিক আকর্ষনী বল এর সূত্রায়ন করতে হবে (২) সেই আকর্ষণী বলের অস্তিত্বে আপনার প্রতি আকৃষ্ট হওয়ার কারণ সিদ্ধ করতে হবে [আইমিন পর্যবেক্ষণ লব্ধ উপাত্ত]।
আচ্ছা এবার বলি তবুও "ল অব এট্রাকশন" এর গল্পে কিছু মানুষের ক্ষেত্রে যে সফলতার সত্যায়ন ঘটে অথবা ঐ আস্ত নির্বোধ লজিক্যাল ফ্যালাসির আড়ালে রহস্যময় আর কি চেতনার অবকাশ থাকে?
হুমমম....যখনই আপনি কোন বস্তুর প্রতি প্রাপ্তির তরে বিশ্বাস রাখেন তখনই সেই বিশ্বাস বস্তুর ওপর ক্রিয়া না ঘটালেও উক্ত বস্তু বিষয়ক চেতনা আপনার মস্তিষ্কে দারূণ আলোড়ন তৈরী করে; সেই বিশ্বাস বস্তুর ওপর নয় বরং উহা প্রাপ্তির জন্য প্রবলতর ইচ্ছার তাড়না আপনার অবচেতন মন'কে ঘিরে থাকে; সেই তাড়না অবচেতন মনের নিয়ত আচরণের সাথে যুক্ত হয় কনশিয়াস তথা সচেতন মনের যুক্তি এবং এনালাইসিস [কঠিন হয়ে যাচ্ছে লেখা তাইনা? আচ্ছা সহজভাবেই বলি...ধরি আপনি একজন ছিন/তাইকারী; সারাদিন গুলিস্তানের মোড়ে মোড়ে বেড়িয়ে ক্লান্ত; পকেটে টাকা নেই যে একটা সুখটানে খানিক মানসিক রিলিফ পাবেন উপরন্তু বাসায় চাল নেই যে বৌ বাচ্চার উদরপূর্তির ব্যবস্থায় মনে খানিক ফূর্তি নিবে ঘুমাবেন। হঠাৎ একা একটা মেয়ে দোকান হতে কিছু কিনে এইমাত্র চিপাগলির আধারে ঢুকবে....এই সুযোগটাতে ব্যগ নিয়ে একটা দৌড় লাগানো যে মানসিক তাড়না সেটা একবার উপলব্ধি করুন তো!] যাতে উহা প্রাপ্তিতে সফলতার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায় বৈকি - তাতে লজিকের নিগূঢ় আচরণ আপনাকে রিয়েলাইজ করতে হবে!
আচ্ছা আচ্ছা.... এইসব তো শুনতে ভালো লাগে কিন্তু প্র্যাকটিক্যাল কি কিছু আছে নাকি?!
আছে তো....এই যেমন প্লাসিবো ইফেক্টে একটা শুধু ভিটামিন ট্যাবলেট আপনার নানান রোগ আপাত সারিয়ে (সুস্থতার জন্য সেরে যাওয়া বলা চলে না) তুলতে সক্ষম - হোমিওপ্যাথিতে যে সুস্থতার আলোচনায় এতো তর্ক লেগে যায় তার কারন এবার বুঝেছেন তো?; পরীক্ষায় ভালো রেজাল্টে করতে আপনার তাড়না আপনাকে ফার্স্ট না বানাতে পারলেও মেরিট লিস্টে ঠিকই রাখে - যার প্রতি প্রচ্ছন্নতা তাকে অবচেতনভাবে অন্যের প্যাটার্নে ঠিকই আবিষ্কার করে ফেলেন!!!
হুমম....তবে তর্ক করলে তা বহুদূর চলে যায় সেটার বিষয়?!
তর্ক মানে সংশয় - এই সংশয় আপনার ভেতর সন্দিগ্ধতায় [প্যাচ খেয়ে গেলাম - যেমন ধরে নিচ্ছেন আমি ভালো মানুষ (ইতিপূর্বে আপমাকে খারাপ মানুষ হিসেবে ছিন/তাইকারী বানিয়েছি এবার নিজেকে খারাপ করে উদাহরণ না দিলে অবিচার করা হয়ে যাবে) অথচ আমার মনে আছে কুটিলতা আর জটিলতার কুমতলব - সুতরাং আমার প্রতি সংশয় থাকলে সেটা তো খাটাপের পরিবর্তে ভালো - এবং তা সচেতনতায় আপনার সেইফটি নিশ্চিত করবে; তাতে সংশয়ের কি দোষ? একটা ছোট্ট গল্প বলি, আপনার যদি একটি মুরগির খামার থাকে তাহলে শিয়াল হতে মুরগি রক্ষায় কি করবেন? আপনার করণীয় হলো শিয়ালকেই পাহাড়াদার বানানো তাতে সে যখন পাহাড়া দিবে তখন মুরগি খাবার তাড়না থাকলেও উহাতে দায়িত্বের বেষ্টনী চলে আসবে (এটা রিলেটিভ - সমালোচনা চলে তা নিয়ে আরও ডিটেইলস গল্প ফাঁদা যায় তবে সেটা করছি না; এটি সূক্ষ সাইকোলজিক্যাল রিয়েলাইজেশান) - বাস্তবিকতার উদাহরণ টানতে হলে দেখবেন বিভিন্ন টেক জায়ান্টে কোম্পানিতে যারা সাইবার সিকিউরিটি দেয় আদতে তারা নিজেরাই কিন্তু এক একটা মস্ত হ্যা/কার - ঐখানে যেমন কম্পিউটার সিস্টেম তেমনি এখানে ব্রেইন ফাংশান! তো এই যে শংসয় সেটা যদি লজিকের ফিল্টারে ছেঁকে জাস্টিফাই করে একটি সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারেন তবে ভালো - কিন্তু আমরা সচরাচই এটা মনে করে মেনে নিই "চুন খেয়ে গাল পুড়েছে - এখন দৈ দেখলে ভয়ে দৌড়ে পালায়" সেটা কিন্তু ভালো না; তো যায় হউক এই সংশয়ে যে জাস্টিফিকেশানের অভাব সেটাই নেগেটিভ ইনআরশিয়া যোগায় আরকি! যাক প্যাচ খুলেছে মনে হয়..] আপনাকে সফলতার সম্ভবনা হতে দূরে নিয়ে যায় [এটা মস্তিষ্কের ডিফেন্সিভ মেকানিজম - এটা বৈশিষ্ট্য তবে সেটারও নিয়ন্ত্রণ থাকা উচিত; যা আপনাদের সিংহভাগ মানুষের নেই] তাইতো বলে তর্কে বহুদূর.......
সুতরাং বিশ্বাসে অবশ্যই বস্তু মিলায় তবে বিশ্বাসের স্বরূপে সাইকোলজিক্যাল মূল্যায়ন যেমন গুরুত্বপূর্ণ তেমনি তর্কে যে বহুদূরের আলাপ সেটাতে কনফিউশান কাছের জিনিসটাকেও দূরে সরিয়ে দেয়!
শুভকামনা রইলো....