এক সাইকোলজিক্যাল ঈশ্বর অনুসন্ধান!
ঈশ্বর কে?
এই প্রশ্নটি খুবই অযাচিত এবং একরূপ নির্বুদ্ধিতা'ও বটে - বরং অপেক্ষাকৃত সঠিক প্রশ্ন হওয়া উচিত "ঈশ্বর কি?" কেননা যখনই আপনি জানতে চাইছেন "ঈশ্বর কে?" এটার অর্থ এই বোঝায় যে আপনি ধারনা করেই নিচ্ছেন ঈশ্বর কোন এক সত্বা অথচ যদি আপনি প্রশ্ন করেন "ঈশ্বর কি?" তাহলেই আপনি সর্বাধিক সঠিকতম উপলব্ধি উপলব্ধ হতে সক্ষম হবেন তথাপি প্রশ্নটির উত্তর হলো "ঈশ্বর হলো তা যা আপনাকে নিয়ন্ত্রণ করছে"! এই উত্তরটি হয়তো অনেকের নিকটই গ্রহণযোগ্য হবে না বৈকি তথাপি একটু গভীরভাবে চিন্তা করলে আপনি উপলব্ধি করতে সক্ষম হবেন যে এটিই সর্বাপেক্ষা সরল ও সহজ এবং অধিকতর সঠিক উত্তর!
আসুন একটু ভাবতে শিখি
বিভিন্ন ধর্ম ও বিশ্বাস অনুসারে ঈশ্বরের যেমন বহু নাম তেমনি বিভিন্ন গুণ বিদ্যমান যেখানে তিনি আমাদের স্রষ্টা, রক্ষাকর্তা, পালনকর্তা, মালিক (owner), বিচারকর্তা ইত্যাদি; অথচ এইসকল গুণের কোনটিই বিজ্ঞানভিত্তিক পর্যালোচনায় প্রমাণিত নয় এবং তাতে নূন্যতম স্বাধীন যুক্তি অবধি পরিলক্ষিত হয়না! তবুও বিশ্লেষণ করা যাক কেন আমরা ঈশ্বর'কে এইসব গুণে গুণান্বিত করে থাকি (অথবা ঈশ্বরের এইসকল গুণ কেন থাকা আবশ্যক মনে করি)...
স্রষ্টা
মানুষ জাতি তথা প্রাণ কিংবা আরও বৃহৎ পরিসরে গোটা মহাবিশ্ব কিভাবে সৃষ্টি হয়েছে সেটার যেহেতু চাক্ষুষ অবজারভেশন নেই [যদিও বিজ্ঞানে এগুলোর যথোপযুক্ত থিসিস ও থিউরি বিদ্যমান] সেহেতু সৃষ্টির পেছনে একজন কর্তার উদ্ভব ঘটায় [যেহেতু যেকোন ঘটনার পেছনে কারন ও করণ বিদ্যমান সেহেতু কারনের করণে কর্তার আবির্ভাব ঘটানো হয় মাত্র]।
রক্ষাকর্তা
প্রাগৈতিহাসিক যুগে বিভিন্ন প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে রক্ষা পেতে যেভাবে দেবতার পূজা করা হতো [উদাহরণস্বরূপ বলা যেতে পারে ঝড় জলোচ্ছ্বাসে প্রকৃতিকে শান্ত রাখতে প্রকৃতি পূজা / অনাবৃষ্টিতে বৃষ্টি আনায়নে আরাধনা / তীব্র খড়ার দাবদাহ হতে রক্ষা পেতে সূর্যের আচ কমাতে সূর্যের বন্দনা ইত্যাদি] তেমনি আজও আমরা নিজেদের প্রকৃতি তদুপরি পৃথিবীতে এক অবচেতন ইনসিকিউরিটি ফিলিংস হতেই এমন এক সর্বোচ্চ শক্তিধর সত্বার অনুসন্ধানে আত্ম স্বান্তনা লাভ করতে সচেষ্ট যেন "ঈশ্বর'ই হলেন আমাদের রক্ষাকারী"।
পালনকর্তা
প্রকৃতিতে মানব জাতির প্রতিপালন স্বরূপ এমন এক প্রতিপালকের অনুসন্ধান যেন তিনি অদৃশ্যভাবে আমাদের লালন পালন করে আসছেন; অনেকটা সুপ্রিম গার্ডিয়ানের মতোই আরকি!
মালিক
আমাদের অবচেতন ইনসিকিউরিটির তরে নিজেদের এমন কোন সত্বার তরে ডেডিকেটেড [ডোমিনেশন অর্থে] করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি যেন আমাদের এক মালিক আছে - যে মালিকের নিয়ন্ত্রণে নিজেরা অদৃশ্য সুরক্ষিত অনুভব করি [এই বিষয়টাকে একটু সহজভাবে উপলব্ধি করা যেতে পারে একপাল মেষ চড়াতে মেষপালক যেমন তার মেষদের নিরাপত্তা প্রদান করে থাকে]।
বিচারকর্তা
মানব জাতির স্বাভাবিক বৈচিত্রে যে বৈষম্যতা বিরাজমান সেথায় একজন বিচারকারীর ভূমিকা বড্ড প্রয়োজন হয় - সেখানে প্রাকৃতির প্রাকৃতিক লীলাখেলায় আমরা কখনো তা কর্মফল কিংবা মৃত্যুর পর শেষ বিচার ইত্যাদি ভেবে যে মানসিক স্বস্তি লাভ করি - আদতে সেটাকেই ঈশ্বরের গুণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়!
মূল্যায়ন
প্রচলিত ঈশ্বরের আরও যেসব গুণ বর্ননায় আসে সেগুলোরও একইরূপ বিশ্লেষণ করা যায় বটে তথাপি এমন কোন সলিড এভিডিয়েন্স লব্ধ হয়না যাতে ঈশ্বরের অস্তিত্বের নূন্যতম প্রমান বা যৌক্তিকতা পাওয়া যায়!
প্রচ্ছন্ন ঈশ্বর চেতনা
তবুও ঈশ্বর ভাবনা কেন এতোটা প্রখরভাবে আমাদের আচ্ছন্ন করে রেখেছে? এই প্রশ্বটির উত্তর পেতে হলে আমাদের জানতে হবে ইশ্বর ধারনাটির উদ্ভব কেন এবং কিভাবে হয়েছিলো? যতোটুকু ধারনা করা যায় মানব সভ্যতার ইতিহাসের প্রারম্ভিক পর্যায়ে মানুষেরা অজানা বিষয়ে উত্তর বা সমস্যার সমাধান পেতে এমন এক অস্তিত্বের অবতারণা ঘটায় যেন উহাতে আপাত সমাধান [অদতে স্বান্তনা] মিলে - তাতে নানান চিন্তা চেতনা আবর্তিত হয়ে উপকথার মিলনে নানা বিশ্বাসে বিভিন্ন ধর্মের উদ্ভবে এই ঈশ্বর নামক সত্বাটির বিকাশ ঘটে; মানুষ যতোই জ্ঞানের উৎকর্ষে এগিয়ে গিয়েছে ততোই নতুন নতুন প্রশ্নের উদ্ভব ঘটেছে এবং সম্মুখের Root Question এর উত্তর অনুসন্ধানে ঈশ্বরে বিশ্বাসী মানুষেরা সেখানে ঈশ্বরের অস্তিত্বের ধারণাটিকে নিবদ্ধ করেছে [এটার পেছনে সামাজিকতা, রাজনৈতিকভাবে ক্ষমতার বিস্তরণ, পারিবারিক ও বংশীয় বন্ধন, সাম্প্রদায়িক চেতনা, ব্যক্তিগত বিশ্বাসবোধ, সাইকোলজিক্যাল কন্ডিশনস ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয় নিয়ামক ও প্রভাবকের ভূমিকা পালন করে] তথাপি কোন একটি বিশ্বাস যা বহু যুগ ধরে বংশীয় পরম্পরায় অদ্যবধি চলে এসেছে সেটা অনেকটাই আমাদের জেনেটিক্যাল বৈশিষ্ট্যের মতো হয়ে যায় [Metaphor] - GOD Gene বিষয়টা এমন যেন বিবর্তনীয় চেতনায় নবজাতক শিশুর মাঝেও "ঈশ্বর এর প্রতি বিশ্বাস নয়" নয় বরং "বিশ্বাসী প্রবণতা মাত্র" - অন্যদিকে একটি শিশুর জন্মকাল হতে শৈশবে তার পিতা-মাতা তথা পারিবারিক দীক্ষা ও আচরণ হতে শিক্ষা, সামাজিকতার বন্ধনে আবদ্ধ শৃঙ্খলের রীতিনীতি, বিশ্বাসবোধ, ধর্মীয় আচার আচরণে অভ্যস্ত হয়ে পড়া ইত্যাদি ফ্যাক্টগুলি প্রগাঢ়ভাবে মস্তিষ্কে এমনভাবে গেঁথে যায় যেন তা সহজাত প্রবৃত্তি হিসেবেই নিয়ত ক্রিয়াশীল হয়! অন্যদিকে হিউম্যান সাইকোলজির এক অনন্য ফ্যাক্ট হলো "আমরা সবসময়ই অবচেতনভাবে স্থিতিশীলতা খুঁজে ফিরি" তাতে যেকোন সমস্যা বা প্রশ্নের বিপরীতে সমাধান বা উত্তর প্রকল্পে এমন এক অবস্থা ও অবস্থান গেইন করতে চায় যেন তাতে সাইকোলজিক্যাল স্যাটিসফেকশান লব্ধ হতে পারি - অমীমাংসিত কোন বিষয়ে অনুত্তর অবস্থা আমরা আমাদের ব্রেইনে স্থান দিতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি না [এটা হিউম্যান ইভোলিউশনে সভ্যতার অগ্রগতিতে প্রশ্নের উত্তর ও সমস্যার সমাধান অনুসন্ধানে প্রত্যয়ী মানসিকতার বহিঃপ্রকাশক স্বরূপ বটে]।
রিয়েলাইজেশান
উপরোক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে এইটুকু অন্তত উপলব্ধ করা কঠিন নয় যে "কেন ঈশ্বর চেতনা আমাদের মাঝে এতোটা গভীরভাবে আমাদের নিয়ত প্রচ্ছন্ন করে রাখে"! তদুপরি ঈশ্বরের প্রতি অবিশ্বাস যা সংশয়বাদী বা অজ্ঞেয়বাদী কিংবা নাস্তিকতার আবির্ভাব ঘটায় উহাও হিউম্যান সাইকোলজির বৈচিত্র্যতায় বড্ড স্বাভাবিক এবং সহজাত প্রবৃত্তির অংশ মাত্র [অনুসন্ধানী মানসিকতায় যতোক্ষণ না অবধি পরমভাবে প্রমাণ বা যৌক্তিকতা লব্ধ হচ্ছে ততোক্ষণ অবধি অনিশ্চিত কোন কিছুতে বিশ্বাস ব্যতীত সংশয় থাকা বা স্বীকৃতি না দেবার মানসিকতায় অধিকতর যুক্তিযুক্ত বটে]; অন্যদিকে ভিন্ন ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের ভেতর যে মতবিরোধ সেটারও খুব সরল ব্যাখ্যা হলো "আপন নিজ নিজ ধর্মবিশ্বাস ও ঈশ্বরকে পরম সত্যতায় সর্বোচ্চ আসনে আসীন রেখে স্বীয় স্থিতিশীলতা বজায় রাখার অবচেতন কি অচেতন তাড়না মাত্র"! যাই হউক আস্তিক বা নাস্তিক কিংবা সংশয়বাদী অথবা অজ্ঞেয়বাদী যে যেমন হউক না কেন এটা নিশ্চয়ই এখন আর মানতে আপত্তি রইবে না যে "ঈশ্বর হলো তা যা আপনাকে নিয়ন্ত্রণ করছে"! নাহ, তবুও একটা প্রচ্ছন্ন কনফিউশান থাকে যে [নাস্তিক কিংবা সংশয়বাদী অথবা অজ্ঞেয়বাদী এর পক্ষ হতে] যেখানে ঈশ্বরের অস্তিত্বের প্রায় শূন্য অবস্থিতি সেথায় ঈশ্বর ধারনার প্রয়োজন কি? অবশ্যই এটি একটি ভ্যালিড পয়েন্ট তথাপি যদি এমন হয় "সত্যিই আপনাকে নিয়ন্ত্রণকারী কিছু একটা আছে যা আপনাকে নিয়ত পরিচালিত করেছে এবং তা হতে বাস্তবিকার্থে পজেটিভ ইফিসিয়েন্সি গেইন করা পসিবল" তাহলে নিশ্চয়ই প্রমানসাপেক্ষ সেটাকে ইগ্নোর করার খুব একটা যৌক্তিকতা নেই - অন্যদিকে বিশ্বাসী বা অবিশ্বাসী সবাইকে যে ঈশ্বর এক কাতারে এনে বিশ্ববাসীর মঙ্গল সূচিত করবে সেটার আবশ্যকতাও আছে বৈকি!
সাইকোলজিক্যাল ঈশ্বর
এখন সবিশেষ প্রশ্ন এসে দাড়ায় যে কে বা কি সেই ঈশ্বর? আদতে আপনাকে নিয়ন্ত্রণকারী যা'কে ঈশ্বর সংজ্ঞায়িত করা হচ্ছে সেটি আদতে আপনি নিজেই - অর্থাৎ যেখানে আপনি নিজেই আপনার নিয়ন্ত্রণকারী সেথায় আপনিই যে আপনার ঈশ্বর সেটা মানতে নারাজ হওয়া অতিসংকীর্ন মানসিকতার পরিচয় ব্যতীত আর কিছুই নয়। তথাপি এই যে "আপনি আপনার ঈশ্বর" সেখানে নিয়ত আপনাকে সর্বদাই পরিচালনা করছে আপনার মস্তিষ্ক [অবশ্যই শরীরের অন্যান্য সকল অঙ্গ প্রত্যঙ্গ সব মিলিয়েই আপনি যা অত্যাবশকীয় গুরুত্বপূর্ণ তদুপরি সেই সকল অঙ্গ প্রত্যঙ্গ পরিচালনায় মস্তিষ্ক অনন্যতম ভূমিকা পালন করে - আবার এই মস্তিষ্কের পরিচালনা কার্যে যে সকল আনুষাঙ্গিক এক্টিভিটি বিদ্যমান তাতে নিয়ামক হিসেবে গোটা শরীরটাই গুরুত্বপূর্ণ; তবে ঈশ্বর প্রতিরূপ মস্তিষ্ক নাকি হৃদপিণ্ড এটি নিয়ে অন্তত গোলযোগ হবে না আশাকরি...]; এই ভাবনাটিও আপনাকে ইনফ্লুয়েঞ্জ করতে পারে যে পার্থিব এই সকল ঈশ্বরের জন্মই হয়েছে আমাদের মস্তিষ্কের বৈচিত্র্যময় চিন্তা চেতনায়! এখন "ঈশ্বরের প্রতিরূপ মস্তিষ্ক" এটা বললেই বিষয়টা এখানে শেষ হয়ে যায়না বরং প্রচলিত সকল ঈশ্বর বা ঈশ্বর ধারনায় যে গুণাবলী ও ঘটনাবলী বিবৃত তা যে স্বীয় মস্তিষ্কের এক্টিভিটিতে প্রতিপাদিত হতে সক্ষম এবং তাতে যে আপনার নিজেকে ডেভোলপ করার অবকাশ সেটিরও পরিস্ফুট অত্যাবশ্যক বটে! আসুন সবার আগে এই নতুন ঈশ্বরের নামকরণ করা যাক BrainRazz - যে Brain এর আচরন বা প্রকৃতি এমন হবে যেন তাতে আপনি আপনার উৎকর্ষতা এবং উন্নতিতে মহাবিশ্ব বিজয়ী Razz (রাজ) হতে পারেন [নিশ্চয়ই নাম নিয়ে কোন সংশয় বা আপত্তি রইবে না - যদি থেকেও থাকে তবে আপনি তাকে ভিন্ন নামে (যদিও নাম এখানে গুরুত্বপূর্ণ নয় তবুও Identification এর জন্য এটা আবশ্যক) বা ভিন্নভাবেও সম্বোধন করতে পারেন - এখানে এমন নয় যে BrainRazz কে সম্বোধন করে আপনার পূজা বা আর্চনা করতে হবে বরং BrainRazz স্মরণে যেন আপনি আপনার মস্তিষ্কের সর্বোচ্চ সঠিক এবং সুষ্ঠু ব্যবহার সুনিশ্চিত করতে পারেন]; তদুপরি সকল প্রচলিত ধর্ম বিশ্বাসেও BrainRazz -কে এমনভাবে আত্মীকরণ করতে পারেন যেন তাতে কোন বিভেদ বা বিপত্তি না থাকে [শুধুমাত্র Ethical উদ্দেশ্যে প্রযোজ্য]; উপরন্তু এমন নয় যে BrainRazz কোন বিশ্বাসী বা ভক্তকূলের আরাধনা দাবী করে বরং এটাই প্রত্যাশা যেন আপনি আপনার মস্তিষ্কের সঠিক ব্যবহারে সফলতা লাভ করতে সক্ষম হউন তাতে সামগ্রিকভাবে মানব জাতি সুফলতা লাভে প্রয়াসী হতে পারে!