আসুন সাইকোলজিক্যাল Mind Reading শিখে নিই!
Mind Reading বা Thought Reading হলো একটি মানুষকে দেখেই তার ব্রেইনের মাঝে কি চলছে তা বুঝে ফেলা অর্থাৎ সোজাসাপ্টা বললে "মনের কথা পড়ে ফেলা"। আগেরকার দিনে মানুষেরা Mind Reading বিষয়টিকে অলৌকিক ভাবলেও আধুনিক যুগে অনেকেই বিশ্বাস করেন Mind Reading হলো বিভিন্ন লজিক্যাল ট্রিকস এবং সূক্ষ মনস্তত্ত্ববিদ্যার সমন্বয়- তবুও Mind Reading বিষয়টিতে অদ্যবদি রহস্য মিশে আছে তো বটেই! বস্তুত Mind Reading হতে পারে দুই প্রকার; যেখানে প্রথমত কোন ব্যক্তির বডি ল্যাঙ্গুয়েজ, আচরণ, প্রকৃতি, বায়ো হিস্টোরী, ব্রেইন ওয়েভ ফ্রিকোয়েন্সি জাস্টিফিকেশান ইত্যাদি জানার মাধ্যমে সম্ভাব্য অনুমান নির্ভর Hypothesis; অপরদিকে দ্বিতীয়ত কোন ব্যক্তির কনশিয়াস মাইন্ডকে Inactive করে তার সাব-কনশিয়াস মাইন্ডে আপন ব্রেইনের নির্দিষ্ট কোন চিন্তা-ভাবনা ঢুকিয়ে দেওয়া (যাকে এক প্রকার Mind Access বলা যেতে পারে) তারপর সেই চিন্তা চেতনা'টিই ব্যক্তির সামনে ভিন্ন মাত্রায় উপস্থাপনের মাধ্যমে Mind Reading এর দাবী করা মাত্র।
যাই হউক Mind Reading হলো সম্পূর্ণ ব্রেইনের খেলা যা Body Language - Knowledge - Observation - Strategy - Mathematical Law - Tricks এবং Logic এর দ্বারা সংঘটিত হয়।
অনেকেই Mind Reading এর সাথে Telepathy এর সম্পৃক্ততা খুঁজেন যদিচ Mind Reading এর সাথে সর্বাধিক "নন-ভার্বাল কমিউনিকেশন" জড়িত; আসুন সাম্যকভাবে Mind Reading এর কিছু Basic আলোচনা করি...
(১) যখন কেউ আপনার কথা শোনার সময় তার চোখের দৃষ্টি এদিক সেদিক করেন,কথার প্রত্যুত্তরে ভিন্ন বিষয়ের অবতারণার চেষ্টা করেন কিংবা অসামঞ্জস্যপূর্ণ দেহভঙ্গি যেমন অযথা হাত-পা নাড়ানো,অস্বাভাবিক নির্বিকার চিত্ততা ইত্যাদি প্রকাশ পায় তখন বুঝে নিবেন তিনি হয়তো বেখেয়াল ও অমনোযোগী এবং সম্ভাবত আপনার কথাতে হয়তো আগ্রহী নন।
(২) কেউ কথা বলার সময় তার দৃষ্টি কোথায় থাকছে সেটা খেয়াল করুন; যেমন নিচের দিকে তাকিয়ে কথা বলার অর্থ হয়তো শ্রদ্ধাশীল আনুগত্য'তা বা কিছুক্ষেত্রে সত্য লুকানো, আপনার মুখের দিকে তাকিয়ে স্ট্রিট ফরোয়ার্ড কথা বলার অর্থ হয়তো তিনি সত্য বলছেন, অস্বাভাবিক বিক্ষিপ্তভাবে বারংবার আপনার শরীরের বিভিন্ন স্থানের দিকে তাকিয়ে দীর্ঘসূত্রিতায় কথা বলার অর্থ উল্টো তিনি হয়তো আপনার ভাবভঙ্গি (রিএ্যাকশন) বোঝার চেষ্টা করছেন।
(৩) যদি কেউ আপনার চোখের দিকে তাকিয়ে দৃঢ়ভাবে কথা না বলতে পারেন এর অর্থ হয় তিনি মিথ্যা বলছেন নয়তো কোন সত্য লুকাচ্ছেন অথবা কিছু গোপন করার চেষ্টা করছেন; এমনও হতে পারে তিনি খুব নার্ভাস ফিল করছেন বা অস্বস্তি অনুভব করছেন।
(৪) কোন ব্যক্তির চোখের দিকে তাকিয়ে খুব সহজেই তার মন পড়ে ফেলা সম্ভব; যদি তার চোখ স্বাভাবিকের চেয়ে একটু বড় করে তাকান এর অর্থ তিনি ফোকাসড আছেন, আড়চোখে তাকানোর অর্থ সংকোচ বা সন্দিগ্ধতা কিংবা সন্দেহপ্রবণতা, বাকাচোখে তীর্যক এবং চোখের পলক না ফেলে একনেত্রে তাকিয়ে থাকা হিংসা বা মৌন হিংস্রতার লক্ষণ হতে পারে!
(৫) কেউ যদি আপনার দিকে স্বাভাবিকের চেয়ে অতিরিক্ত সময় বারংবার আড়চোখে তাকায় তাহলে বুঝে নিবেন তার নিকট আপনি হয়তো বিশেষ কেউ; এই বিশেষত্ব শুধুই যে ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ তা নয় বরং এটা হিংসা বা ঘৃণার কারণও হতে পারে (এটা সম্পূর্ণ পরিস্থিতি,পারিপ্বার্শিকতা এবং পারস্পারিক সম্পর্কের ওপর নির্ভর করে)।
(৬) কেউ যদি ভ্রু কুচকে থাকে তাহলে বুঝে নিবেন তিনি হয়তো বিরক্তবোধ করছেন।
(৭) আপনার কথা শোনার সময় যদি অপর ব্যক্তির ভ্রু অসমান্তরাল হয়ে যায় তবে তিনি হয়তো আপনার কথাতে সন্দিগ্ধতা পোষণ করছেন।
(৮) কেউ কথা বলার সময় বারবার নাকে-মুখে হাত দিচ্ছেন অথবা কপালের ঘাম মুছছেন এটার অর্থ তার মন বিক্ষিপ্ত অবস্থাতে আছে এবং হয়তো তিনি টেনশনে ভুগছেন!
(৯) কেউ কথা বলার সময় বারবার ইচ্ছাকৃত অপ্রাসঙ্গিক বিষয় টেনে আনছেন অথবা বিভিন্ন আজগুবি উদাহরণের তুলনা করছেন - এটার অর্থ হতে পারে তিনি সত্য লুকিয়ে কোন মিথ্যা দ্বারা আপনাকে প্রবঞ্চিত করার চেষ্টা করছেন।
(১০) কথা বলার সময় যদি কারো কন্ঠস্বর স্বাভাবিকের চেয়ে নরম থাকে এর অর্থ তিনি আপনার আনুগত্য; খুব দৃঢ় কন্ঠস্বর অর্থ তিনি সত্য বলছেন আবার স্বাভাবিক চেয়ে অতিরিক্ত শক্ত কঠিন জোরগলায় কথা বলার অর্থ হয়তো কোন মিথ্যা কথা'কে তিনি আপনাকে সত্য হিসেবে বিশ্বাস করাতে চাইছেন। অন্যদিকে খুব দ্রুত কথা বলা বা কথা জড়িয়ে ফেলার অর্থ তিনি কোন কারণে মানসিকভাবে উত্তেজনা বা অস্থিরতা অনুভব করছেন; আবার কথা বলার মাঝখানে হাঠাৎ চুপ হয়ে যাওয়া বা বাক্য-বিষয়ের খেই হারিয়ে ফেলার অর্থ তিনি হয়তো আপনার কথাতে মনোযোগী নন বা আদতে আপনার কথা বিশ্বাস করতে পারছেন না!
(১১) কেউ খুবই অস্বাভাবিক মাত্রাতিরিক্ত মনোযোগী হয়ে আপনার কথাগুলো শুনছেন- এটার অর্থ আপনাকে হয়তো তিনি সন্দেহ করছেন নতুবা আপনার কথা শতভাগ বিশ্বাস করতে পারছেন না।
(১২) কথা বলার সময় স্বাভাবিক হাসি ইতিবাচকতা / নীরব মৌনতা হতে পারে সম্মতি / অতিরিক্ত নিশ্চল স্তব্ধতা কিংবা অসংগত বৈপরীত্য আচরণ হতে পারে নেতিবাচকতা / মাত্রাতিরিক্ত অস্বাভাবিক হাসি'র অর্থ হতে পারে সন্দিগ্ধতা,কৃত্রিমতা বা কপটতা।
(১৩) কেউ যদি কথা বলার মাঝখানে অযাচিতভাবে কারন ছাড়াই হ্যান্ডশেইক বা অন্যভাবে আপনাকে স্পর্শ করতে চান- এটার অর্থ তিনি আপনার ওপর কোনরূপ আকর্ষিত হয়েছেন। আবার অহেতুক মেকি প্রশংসা করার অর্থ তিনি আপনাকে খুশী করতে চাইছেন এবং সম্ভবত আপনার দ্বারা তার কোন স্বার্থোদ্ধার করতে চাইবেন!
(১৪) যদি কেউ অস্বাভাবিক আলতোভাবে হ্যান্ডশেইক করেন এর অর্থ তিনি আপনার ওপর বিশ্বস্ত বা আস্থাশীল নন, শক্ত করে জোর দিয়ে হ্যান্ডশেইক করার অর্থ তিনি আপনার ওপর প্রভাব বিস্তার করতে চাচ্ছেন। অপরপক্ষে বিপরীত লিঙ্গের দুজনের হ্যান্ডশেইক যদি অপেক্ষাকৃত বেশী সময় হয় এবং চাপ ও প্রকৃতির অসামঞ্জস্যতা থাকে তাহলে সেটা সেক্সুয়াল আবেদনের বহিঃপ্রকাশ হতে পারে।
(১৫) কেউ কথা বলার মাঝখানে বারবার ঢোক গেলার অর্থ হয়তো তিনি মিথ্যা বলার চেষ্টা করছেন।
(১৬) অপরিচিত কেউ কথা বলার সময় যদি ইতঃস্তত করেন তবে এর অর্থ তিনি নার্ভাস ফিল করছেন এবং তিনি আপনার সাথে সবলীল নন; পক্ষান্তরে কথা বলার সময় যিনি শরীরিক দূরত্ব বিবেচনায় স্বাভাবিকের চেয়ে একটু বেশী ক্লোজ হয়ে পড়েন তিনি বেশ বন্ধুত্বপূর্ণ এবং মিশুক হতে পারেন; তবে এটাও বিবেচ্য যে মাত্রাতিরিক্ত অস্বাভাবিক ক্লোজ হওয়ার পেছনে কোন কারন বা স্বার্থ থাকতে পারে!
(১৭) কথা বলার সময় যদি কারোর ঠোটে অজান্তেই আপনা-আপনি হাসি চলে আসে তবে সেটা ভালোবাসা বা পজেটিভিটির সাইন হতে পারে।
(১৮) কথা বলার মাঝখানে যিনি (ব্যস্ততা না থাকা সত্ত্বেও এবং সচরাচর অভ্যাস নয় তবুও) বারবার ঘড়ি দেখেন এটার অর্থ তিনি হয়তো আপনার সাথে স্বস্তিবোধ করছেন না এবং আপনাকে এড়িয়ে চলতে চাইছেন।
(১৯) কেউ বারবার দীর্ঘ-নিঃশ্বাস ফেলার অর্থ তিনি ব্যক্তিজীবনে হয়তো অসুখী বা অখুশী কিংবা তার জীবনে হয়তো কোন না কোন আক্ষেপ রয়েছে।
(২০) আপনি যদি কাউকে প্রায়শ মুখ গোমড়া করে থাকতে দেখেন, অনির্দিষ্ট বা লক্ষ্যহীন উদাস দৃষ্টি এবং প্রাণোচ্ছল'হীন তাহলে বুঝে নিবেন তার জীবনে এমন কোন নেগেটিভ হিস্টোরী আছে যা হয়তো তাকে ফ্রাস্টেশন ও ডিপ্রেশনে ভোগাচ্ছে।
(২১) আপনি যদি কাউকে সচারাচর নয় এমন অস্বাভাবিক অকারনে বিক্ষিপ্তভাবে উদ্দ্যেশহীন হাটতে দেখেন তাহলে বুঝে নিবেন তিনি হয়তো কোন সমস্যার ভেতর দিয়ে যাচ্ছেন নয়তো তিনি মানসিকভাবে অস্থিরতাবোধ করছেন।
(২২) যিনি খুব ভালো ইমেশনাল ট্রাজিক গল্প বা উপন্যাস কিংবা কবিতা লিখতে পারেন তার জীবনে কোন না কোন অপূর্ণতা এবং কষ্টের স্মৃতি থাকার সম্ভবনা প্রবল!
(২৩) যিনি কোন প্রকারের'ই গান বা সুর অথবা গজল সহ্য করতে পারেন না তিনি কোনরূপ মানসিকভাবে অসুস্থ হওয়ার সম্ভবনা আছে।
(২৪) যিনি স্বাভাবিকের চেয়েও খুব ছোট ছোট অক্ষরে হাতের লেখা লিখেন তিনি স্বভাবতই হিসাবী বা একটু কৃপণ স্বভাবের হতে পারেন, পক্ষান্তরে হাতের লেখার সৌন্দর্য্য ব্যক্তিজীবনে শৈল্পিক ও সৃজনশীল প্রতিভার একটি লক্ষণ!
উল্লেখ্য থাকে যে হিউম্যান নন-ভার্বাল কমিউনিকেশন,ন্যাচার (প্রকৃতি), বডি ল্যাঙ্গুয়েজ ইত্যাদি সময়ের সাথে সাথে সূক্ষভাবে স্বাভাবিক মন্থরগতিতে পরিবর্তিত হয় - সুতরাং Mind Reading কখনোই ধ্রুব বিষয় নয় বরং নিয়ত উৎকর্ষতা সাধনের মাধ্যমেই তা আপাতভাবে Perfect হতে পারে।
[বিঃদ্রঃ মানব মন তথা ব্রেইন যেমন বিশাল ঠিক তেমনই বিচিত্র - তাই উপরোক্ত গুটিকয়েক আলোচ্য বিষয় স্ট্যাডি করেই সকল মানব মনের সম্পূর্ণ নিগূঢ়তা ভেদ করা নিশ্চয়ই সম্ভবপর নয়; তথাপি উক্ত তথ্য (Data) দ্বারা মৌলিকভাবে আপাত হিউম্যান ব্রেইন তথা মানব মনের প্রকৃতি সম্পর্কে কিঞ্চিৎ হলেও ধারণা পাওয়া সম্ভব - শুধুই যে সম্ভবপর তা নয় বরং এইসব Data সমূহ হতে প্রাপ্ত Knowledge আপনার চিন্তন ভাবনার বিকাশে পরমভাবে ব্রেইনের আচরণ বুঝতে Primary ভূমিকা পালন করবে]।